top of page
Krshnachandrapaul.jpg
 কবি চন্দনকৃষ্ণ পাল
 
কবি চন্দনকৃষ্ণ পাল আশির দশকের শক্তিমান কবিদের মধ্যে অন্যতম কবি। তাঁর কবিতায় ব্যতিক্রম হচ্ছে গদ্যছন্দের পাশাপাশি, মুক্তকছন্দ এবং ছড়া সাহিত্যে বা অন্তমিল শব্দ-ছন্দের বৈশিষ্টতা। তিনি ছড়া সাহিত্যের জন্য এক সময় পুরস্কৃত হয়েছেন। তাঁর সাহিত্যের সর্বোপরি উত্থান কাব্যবলয়কে করেছে আরো শক্তিশালী। সমানভাবে তিনি সাবলীল সাহিত্যের সবগুলো বিষয়ে। কবির জন্ম; ১৯৬৫ সালের ১লা মে তারিখে, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তরসুর গ্রামে। পিতা নীরোদ রঞ্জন পাল,মাতা শেফালী পাল শেলী। ১৯৮২ সাল থেকে তাঁর লেখালেখি জগত উন্মোচিত হয়। ১৯৯২-৯৩ সালে লিটলম্যাগ ‘দ্রষ্টব্য’র সাথে জড়িয়ে পড়েন। সম্পাদনা করেছেন ছড়াপত্র প্রবাহ, চান্দ্রেয়ী, একফর্মা ছড়াপত্র, কবিতাপত্র নৈ। বর্তমানে সম্পাদনা করছেন ছড়া বিষয়ক লিটলম্যাগ ‘ছড়াপত্র’।

প্রকাশিত গ্রন্থঃ ‘ভূতের নাম তিড়িং বিড়িং’‘আকাশ নীলে হলুদ পাখি’‘ঘাসফড়িঙের নয়টি পা’‘গিট্টুমামার সাধু দর্শন’‘গিট্টুভূত ও তিড়িংবিড়িং’‘উপমার বাঘমামা’‘কালো দানবের পাতাল যাত্রা’‘পরীর নাম জুঁই’‘ছোট্ট হাতের লম্বা কাণ্ড’এবং ‘অবশেষে চৈত্র অন্তিমে’। সম্পাদিত গ্রন্থ ‘শ্রীহট্টের সূর্য সন্তান’। আশির দশকে ছড়া পরিষদ,সিলেট পুরস্কার লাভ করেন।১৯১৯ সালে ‘ঢালপত্র’ পদক পেয়েছেন।ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর কবি কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে উপ-পরিচালক (অর্থ) হিসাবে কর্মরত আছেন।

এই সপ্তাহের কবিতা

 কবি চন্দনকৃষ্ণ পাল

কষ্ট কাহন
 

রোদের কাছে হাত পেতেছি একটু আলো পাবো বলে
এখানেও হিংসা আছে দেখে আমি ভীষণ হতাশ
কুয়াশারা চাদর বিছায় আলোর পথে বাঁধা হয়ে
শীতলতার তীব্রতাতে আমি দারুণ কষ্টে থাকি।

উমের আশায় এসে যদি শীতলতার পরশই পাই
মনের ভেতর ক্ষোভ জমে তো,ক্ষোভ জমাটাই সংগত হয়
গায়ের জোরে হাত বাড়ানো অন্যায় এটা যে বুঝে না
মূর্খ তাকে বলা তো যায়,ঘৃণাও যায় উগড়ে দেয়া।

চাই হতে চাই সমালোচক, চেয়েছি তো উষ্ণতাকেই
সে পথ তুমি বন্ধ করে আনন্দ পাও, অবাক আমি-
বিকৃত আনন্দ নিয়ে কদিন বাঁচে খাঁটি মানুষ?
তোমার সময় শেষ হলো এই আর কটা দিন আছে বাকি।

তোমার দাপট শূন্য হবে,ছিন্ন হবে সকল সুতো
মাঘ জমানা কদিন থাকে? বসন্ত এই এলো বলে
নতুন পাতা রং ছড়াবে,সুঘ্রাণও তো সাথে রবে
তোমার তখন অন্ধকারকে বেছে নেবার সময় হবেই।

 

 
 

 


অন্ধকার
 

শুভেচ্ছা বাণী পেয়ে খুশি হতে পারি না যে
ভেতরে তো হাহাকার চলে-
ব্যানার আর ফেস্টুনে বন্ধুর হাসি ঝরে পড়ে
আমি জানি বিদ্রূপের হাসি,তোমরা জানো না!

ত্রাণের পোটলাসহ ক্যামেরায় হাসি মুখ দেখি
একজনে দশজন ত্রাণদাতা হওয়া কী হাস্যকর ,
তোমরা বুঝো না তা
স্থূল বুদ্ধি ধার করে নেতা হয়ে গেলে?
ভুড়তে বুলিয়ে হাত নগদ ঢেকুর তোল লাল মাংসের।

তোমরাই ভবিষ্যৎ হবে?
আমি এই উজ্জ্বল দিনটায়ও অন্ধকার দেখি!

 

 

 



রঙ দিয়ে রঙ মুছে ফেলি
 

ক্লিনশেভড মুখে আজ দাঁড়ির জঙ্গল দেখে বাকরুদ্ধ হই।

ঘাড় অব্ধি নেমে আসা চুলে
আবাস বানিয়েছে পোকা মাকড়েরা,
তবু তুমি নিঃস্পৃহ রবে?
ভাবতে পারি না।

ভাবনায় এমন ছিলো নাÑ
রাজপুত্র ভেবে ক্যানভাসে দিয়েছি তো রঙ
উজ্জ্বল আলোতে ছিলে ফেলে আসা দিনে
আজ দেখি অন্ধকারে তারার রোদন।

আমি বিমর্ষ হই
রঙ সব মুছে ফেলি অন্য রঙ দিয়ে।

 

 

 

 


শেষ কথা, শেষ কথা নয়
 

জোড়াতালি দিয়ে দিয়ে
সাজিয়েছি এ ভব সংসার।
এতে তুমি খুঁত ধরো,
ত্রুটি নিয়ে বিদ্রূপে সাজাও আসর
নিজেকে নিখুঁত ভাবা ভালো কথা নয়,
ত্রুটিহীন বললেও
ত্রুটি থেকে যায় জানি সকল সৃজনে।

শেষ কথা বললেও
শেষ কথা শেষ হয় না তো-
তারপরও ও শেষ থাকে
আমরা তা জানতে পারি না।

 

 

 

 


মানবী অথবা অন্য কিছু
 

নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছ এই সকাল দুপুর রাত
কি দিয়ে করলে বশ?
ভেবে হই হতবাক আমি
এই প্রযুক্তি প্রাচুর্যের যুগে
কলুর বলদের মতো নয়,চোখ খোলা রেখেও সে
ঘুরছে চক্রাকারে কাঁধে রেখে কঠিন জোয়াল!

আহা,মানুষের কি পরিণতি!
তুমি মানবী হলে সত্যি কি করে সম্ভব এই
ভয়াল সমীকরণ?
ডাইনীর কনসেপ্ট বুঝা না বুঝার দায়
কাঁধে নিয়ে বলে যাই-
সত্যিই বোকা গাধা আছি,আজ অবধি-

যথার্থ শিক্ষা নিয়ে কবে যে মানুষ হবো
ভেবে ভেবে সারাদিন যায়.. ।

 

 


শহরের ঋতুগুলি



ঋতুরা শহরের  আশপাশে আসতে চায় না আর
ছাদ বাগানের যতো লতা গুল্ম আছে
তারাও গৃহস্থের কথা মতো চলে।
ইট কাঠ কংক্রিটে ছেয়ে থাকা শহরে আজ
ঋতুর স্পর্শের ক্ষমতাও নেই,
তাই ঋতু গ্রামের সবুজেই রাখে তার চোখ।

দূষণের চরম ক্ষমতা এখন
তাই ধূলিতে ধূসরিত সবুজের শরীরে আজ ক্লেদের দাপট।

তারপরও ভিখিরির মতো দুএকটা আ¤বৃক্ষ পল্লবিত হয়
নিজস্ব মুকুলে রাখে মিষ্টি সোঁদা ঘ্রাণ
নাগরিক আমি জানি বসন্ত এলো
ভ্রমর কি উড়ে আসে নগর জঞ্জালে?

চোখ রাখা হয় না তো কর্মব্যস্ত দিনে
বিষাদের নিঃশ্বাসে ভরে এই ঘর।

 

 

 


                                                                                                                                                
রাত যাপন,নীল ক্যানভাস নিয়ে
 

নীল আলোতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ  করি বলেই
বেলকনিতে প্রতি রাতে নীল আলো জ¦লে
আমার সমুদ্র মানে আলোকিত বারান্দার রাতের শরীর
ঢেউ, শব্দ, ফসফরাসের আলো
সব কিছু নিয়ে করি রাত্রি যাপন।

তোমার গাঢ় ঘুম শব্দ আজকাল বিচলিত করে না আমাকে
আমার সমুদ্র রাত ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখে জাগতিক যন্ত্রণা থেকে-

এই ভালো,
অন্যরকম এক ফেরারি জীবন
নীল আলো আর রাতের নিজস্ব শব্দ নিয়ে
দিন যাপনের চিত্র এঁকে যাবো নীল ক্যানভাসে।

bottom of page